সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দামে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। গড়ে কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বেশিরভাগ সবজির দাম। চালের দামও কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা কমেছে। পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। তবে বেড়েছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াবাজার, শান্তিনগর ও কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত আগস্টে বেসরকারিভাবে ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানি করা চালে সরবরাহ বেড়ে দামও কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে কেজিতে চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
বর্তমানে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৬ থেকে ৮২ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ৮৬ টাকা। এ হিসেবে নাজিরশাইল চালের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ৪ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭৪ থেকে ৭৯ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭৬ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের ব্রি-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬১ থেকে ৬৪ টাকা। পাইজাম চালের দাম এখন ৫৯ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬১ থেকে ৬২ টাকা। স্বর্ণা ও গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা।
কারওয়ান বাজারের জনতা রাইস এজেন্সির মালিক আবু ওসমান বলেন, সিদ্ধ চালের সরবরাহ বেড়ে দাম কমলেও পোলাও চালের বাজার একটু চড়া। পোলাও চালের ২৫ কেজির বস্তার দাম আগে ২ হাজার ১৫০ টাকা ছিল, দুই সপ্তাহ ধরে তা ২ হাজার ৪৫০ টাকায় ঠেকেছে। আগে যে চাল ৮৫ টাকা করে বিক্রি হতো, সেটা এখন ৯৮ টাকা। আর যেসব পোলাও চাল ১০১ টাকা দরে ছিল সেগুলো হয়ে গেছে ১১০ টাকা।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা কয়েক সপ্তাহের ঊর্ধ্বগতির পর সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। আশ্বিনে মৌসুমি সবজি সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। আগামী দিনে আরো দাম কমবে।
তবে পাইকারির তুলনায় খুচরা বাজারে দাম কমছে খুব ধীরগতিতে। তেজকুনিপাড়া এলাকা থেকে আসা আজমিরা নামের এক ক্রেতা বলেন, আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই তো গ্রামাঞ্চলে নতুন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। এতে সবজির পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরায় খুব একটা বেশি কমেনি। এ জন্য বাজার মনিটরিং দরকার বলে মনে করেন তিনি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কমে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া ১২০-১৩০ টাকার টমেটোর দাম হয়েছে ১০০ টাকা, ৮০-১০০ টাকার করলার দাম হয়েছে ৫০-৬০ টাকা, ৭০-৮০ টাকার ঢেঁড়শ ও পটোল ৫০-৬০ টাকা, ১০০-১২০ টাকার লম্বা বেগুনের দাম ৬০-৭০ টাকা, ১৩০-১৬০ টাকার গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, ৭০-৮০ টাকার চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ৮০ টাকার লাউ হয়েছে ৬০ টাকা, ৩০-৪০ টাকার পেঁপে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা।
একই সঙ্গে বাজারে বর্তমানে কেজিপ্রতি কাঁকরোল ৬০ টাকা, কচু ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৯০-১০০ টাকা, ধনিয়া পাতা ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামের মতো দাম কমেছে পেঁয়াজ ও আলুর। বর্তমানে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং আলু ২০ টাকা থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও দাম বেড়েছে মুরগির। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা, পাকিস্তানি সোনালি কক মুরগি মানভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোলট্রি খাতের উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় মুরগির দামের ওপর প্রভাব ফেলছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায় এবং সাদা ডিমের ডজন ১৩০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
এর মধ্যে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। মিঠা পানির চাষ করা রুই, কাতলা, তেলাপিয়া ও সরপুঁটির দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকায়, আর তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা দরে। এছাড়া অন্যান্য মাছের দাম স্থিতিশীল থাকলেও ইলিশের দাম বাড়তির দিকে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।